ঠাকুরগাঁয়ে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে কৃষক। গত দুই মাসে প্রতারক চক্র ৬ জন কৃষকের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকার সবজি হাতিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুস সামাদ নামে এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে প্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, সবজি ওঠার আগেই ঢাকা থেকে আসা কিছু দালাল এ এলাকায় আটঘাট বাঁধে। স্থানীয় কয়েকজনকে ম্যানেজ করে কৃষকদের বেশি লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখায়।
কৃষকরাও বেশি লাভের আশায় ট্রাক বোঝাই করে সবজি পাঠায় ঢাকায়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতারক চক্র কৃষকদের আর টাকা দেন না। এ ধরনের ঘটনা ঠাকুরগাঁয়ে ঘটছে অহরহ। সর্বশান্ত হয়ে কৃষক মাসুদ হাসান পলাশ বাদি হয়ে ঠাকুরগাঁও থানায় মামলা দয়ের করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর মুলা, করল্লা, লাউ ও ফুলকপি বোঝাই এক ট্রাক সবজি পাঠায় ঢাকার দক্ষিন যাত্রবাড়ির আবুল কামাল নামে এক আড়ৎদারের কাছে। স্থানীয় দালাল মজিবর রহমান মজি ও ঢাকার প্রতারক চক্রের সদস্য সামাদের প্রলোভনে নারগুন এলাকার কৃষক আব্দুস সোবাহান, আব্দুর রব, মাসুদ হাসান ও রহিম ওই ট্রাকে সবজি পাঠায়। ট্রাকের সাথে সবজি নিয়ে যায় তাজুল ইসলাম। ২৯ অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকাস্থ যাত্রাবাড়ির মাইজ ভান্ডরী বানিজ্যালয় নামে ওই আড়ৎদারের ঘরে সবজি নামানো হয়। সেখানে সবজির বিক্রির টাকা না দিয়ে তাজুল ইসলামকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তাজুল ইসলাম সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে প্রানে রক্ষা পায়।
এদিকে এ খবর ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা শুনে ঢাকার ওই আড়ৎদারের দালাল সামাদকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। পরদিন ঠাকুরগাঁও থানায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মাসুদ হাসান বাদি হয়ে ঠাকুরগাঁও থানায় ৩ জনকে আসামী করে থানা মামলা করে।
এদিকে অক্টোবর মাসের প্রথম সাপ্তাহে নারগুন ইউপি সদস্য মোসলিম উদ্দিন দালালের খপ্পড়ে পরে ঢাকার কারওয়ান বাজারের হারুন নামে এক আড়ৎদারের কাছে প্রায় ৬০ হাজার টাকার সবজি দিয়ে প্রতারনার শিকার হয়। এ ছাড়াও স্থানীয় দালাল মজিবর রহমান মজির খপ্পড়ে পড়ে ঠাকুরগাঁও শাহা পাড়ার সাদেকুল ইসলাম নামে এক চাষির ৬৫ হাজার টাকার সবজি হাতিয়ে নেয়। পরে দালাল মজিবর রহমানকে চাপ দেয়া হলে ৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়।
তাজুল ইসলাম জানান, কোন মতে জীবন নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে এসেছি। ট্রাক থেকে সবজি নামানের সাথে সাথে তাদের রুপ পাল্টে যায়। দেখায় নানা ধরনের ভয়ভীতি।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মাসুদ হাসান পলাশ অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে কৃষক। এই চক্রের মুল হোতাদের গ্রেপ্তার করা না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
কৃষক রহিম জানান, অনেক কষ্টে লীজ নেয়া সামান্য জমিতে সবজির আবাদ করেছি। প্রতারকের ফাঁদে পড়ে এবার লোকশান গুনতে হচ্ছে।
সাহাপাড়ার সাদেকুল ইসলাম জানান, ৬৫ হাজার টাকার সবজি নিয়ে প্রতারনা শুরু করে। পরে বেশ কিছু দিন ঘোরাঘুড়ির পর ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে। তবে স্থানীয় দালাল মজিবর রহমান মজি জানান, সবজির টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়েছে ঢাকার আড়ৎদাররা। সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একই সুর দিলেন ঢাকার আড়ৎদার কামাল হোসেন। এ ব্যাপারে সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) সফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই চক্রের মুল নায়কদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।