অচলাবস্থার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা। একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে চলছে ইঞ্জিন ও যাত্রীবাহী বগির সংকট। রেলপথের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন না হওয়ায় ট্রেন চলাচল রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এদিকে, স্টেশন মাস্টার, গার্ড, ড্রাইভার, অপারেশনাল স্টাফের অভাবসহ নানা কারণে এই জোনের ৭২টি রেলস্টেশন ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো ২৯টি স্টেশন বন্ধের পথে রয়েছে। নির্ধারিত সিডিউল মোতাবেক ট্রেন চলাচল করতে পারছে না।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকশী ডিভিশনের ৪৫টি ও লালমনিরহাট ডিভিশনের ২৭টি। পাকশী ডিভিশনের বন্ধ স্টেশনগুলো হলো- চেংগুটিয়া, ফুলতলা, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, রূপদিয়া, মেহেরুল্লাহ নগর, আনসারবাড়িয়া, শরৎ নগর, জয়রামপুর, মোমিনপুর, মুন্সিগঞ্জ, ইয়াছিনপুর, শাহাগোলা, তিলকপুর, বিলাইচন্ডি, দারোয়ানী, মির্জাগঞ্জ, নন্দনগাছি, নাচোল, নেজামপুর, জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া পাঁচুড়িয়া, বেলগাছি, নাভারণ ও ঝিকরগাছা। আর বন্ধের পথে রয়েছে- মীরগঞ্জ, মালঞ্চি, রাণীনগর, হিলি, শিতলাই, কাঁকনহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রোহনপুর, গোয়ালন্দ বাজার, গোয়ালন্দ ঘাট, কুমারখালী, বেনাপোল, জামালগঞ্জ ও দর্শনা। লালমনিরহাট ডিভিশনের বন্ধ স্টেশনগুলো হলো- বাউরা, অন্নদানগর, উলিপুর, হাতিবান্ধা, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম, রমনাবাজার, আনন্দবাজার, কাঞ্চিপাড়া, বালাসীঘাট, ভরতখালি, মন্মথপুর, কিসমত ও নসরতপুর। বন্ধের পথে রয়েছে- আদিতমারী, কাঁকিনা, ভোটমারী, পাটগ্রাম, বুড়িমারী, বিরল, কাঞ্চন জং, মঙ্গলপুর, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, শিবগঞ্জ, ভোমরাদহ, রুহিয়া, মহেন্দ্রনগর, পঞ্চগড়, ভেলুরপাড়া, নলডাংগা ও ত্রিমোহনী।
পাকশী ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, এ ডিভিশনে ৪২টি আন্তঃনগর, ৩২টি মেইল ও ৩৮টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এ ট্রেনগুলো চালাতে প্রয়োজন ৬২টি সচল ইঞ্জিন। কিন্ত সংখ্যায় এখানে ৭১টি ইঞ্জিন থাকলেও এর মধ্যে ২৪টি ইঞ্জিন সার্বক্ষণিক মেরামতে থাকে। এ ইঞ্জিনগুলো বয়সের ভারে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে পথিমধ্যে মাসে অন্তত ৫টি ইঞ্জিন অচল হয়ে পড়ে। এ ডিভিশনে ১৮৮ জন স্টেশন মাস্টার ও ২৭১ জন ইঞ্জিন চালক পদ শূন্য রয়েছে। অচিরেই আরো অন্তত ৫০ জন ইঞ্জিন চালক অবসরে যাচ্ছেন। রেলের গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল পদ হচ্ছে পয়েন্টস ম্যান। অথচ এখন ১২০ জন পয়েন্টসম্যানের পদ শূন্য রয়েছে। লালমনিরহাট ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, এ ডিভিশনে ৮৮ জন স্টেশন মাস্টার, ৪২ জন গার্ড ও ৫২ জন পয়েন্টসম্যান পদ শূন্য রয়েছে। এ ডিভিশনে ৩৭টি ইঞ্জিন প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ২০টি। ইঞ্জিন, গার্ড ও অন্য লোকবলের অভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রেল সচল রাখতে শূন্য পদ পূরণের জন্য রেলওয়ের পশ্চিম জোনের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয় থেকে গত ২ জুন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন জানানো হয়েছে। এতে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ ও সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সুস্থ কর্মচারীদের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার এ ধরনের সুপারিশ পাঠানো হলেও কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের জেনারেল ম্যানেজার আনহার মাহমুদের সাথে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় মিটিংয়ে যাওয়ার কারণে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জনবল সংকটের কারণে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে। রেলওয়ের বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন এবং আরো অনেক কর্মচারী চলতি বছরেই অবসরে যাবেন। তাছাড়া রেলের কাজ টেকনিক্যাল হবার কারণে জনবল নিয়োগের পরই তাদের কাজে লাগানো যায় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের রেল সার্ভিসে দক্ষতা অর্জনে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন।