দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা আর দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো কার্যকর করা ছিল এই সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। অথচ এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আইন করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, এই সরকার এখন দুদককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অপরদিকে সরকার দলীয় (আওয়ামী লীগের) নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সাড়ে ৪ শত দুর্নীতির মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইনের মাধ্যমে দুদককে দুর্বল করে দেয়ার পর থেকে দুদকের কার্যকরিতা এবং বর্তমান সরকারের দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের নির্বাচনী অঙ্গীকার প্রশ্নের মুখে পড়ে। উন্নয়ন সহযোগীরাও সরকারের দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পার্টনারশীপ ফর দ্য ট্রান্সপারেন্সি ফান্ডের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক বাংলাদেশ প্রতিনিধি পিয়েরে লেন্ডল মিলস বলেছেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাংলাদেশে দুর্নীতির গল্প সবখানেই আছে। দুর্নীতির কারণে সরকারি অর্থের বড় ধরনের অপচয় হয়। এই সরকারের দুর্নীতি দমন কার্যক্রম শিথিল হওয়ায় দাতাদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে সংবাদপত্রে যেসব খবর ছাপা হচ্ছে তাতেই বুঝা যায় দুর্নীতি দমন আর দুদকের বাস্তব অবস্থা। প্রঙ্গক্রমে কিছু সংবাদ শিরোনাম তুলে ধরা হলো- ভোরের কাগজ ৮.১.১০ ‘দুদকের কর্মকান্ডে গতিশীলতা নেই', ইনকিলাব ২.১২.০৯ ‘দুদকের ৩৮৫ পদ শূন্য কাজের গতি নেই', সমকাল ১১.১২.০৯ ‘দুদক চলছে ঢিমেতালে', দিনকাল ৩১.১২.০৯ ‘রাজনৈতিক সরকারের এক বছরে গতি আসেনি দুদকে', জনকণ্ঠ ১১.০১.১০ দীর্ঘসূত্রতার জটে আটকে আছে দুদকের ১৭০০ মামলা', ইনকিলাব ১৬.০১.১০ ‘২৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কর্মকর্তা', যুগান্তর ১৮.০১.১০ ‘বরিশালে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে দুদক', যুগান্তর ২৫.০১.১০ ‘দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার : চাপের মুখে দুদক' একই পত্রিকায় ১৬.০২.১০ইং ‘সরকারের দুর্নীতি দমন কার্যক্রম শিথিল হওয়ায় দাতাদের উদ্বেগ', সমকাল ১৭.০২.১০ ‘দুদক আছে, দুদক নেই', ইনকিলাব ২০.০২.১০ ‘দুদকেই দুর্নীতি : অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার একজনই ৪৫ কোটি টাকার মালিক, আরো ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা স্বীকার করলেন চেয়ারম্যান'। ২১.০২.১০ ‘টিআইবি'র প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় যে, দুর্নীতি কমছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হয়- সরকারের সদিচ্ছার অভাব, দুর্বল দুদক, কার্যকর প্রশাসনের অভাব। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের সভায় উন্নয়ন সহযোগীরা দুর্নীতি দমন ও সুশাসনের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। দুদক স্থবির, সরকারের ইশারায় চলছে দুদক। ‘দুদকের ফাইল নিখোঁজ' চট্টগ্রামে ৮৭ কোটিপতির দুর্নীতি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশনেই এখন দুর্নীতি আর অনিয়মের ছড়াছড়ি।
সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের কথা বললেও দুর্নীতি এখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি দমন বা কমিয়ে আনার কোনে উদ্যোগ নেই।